নূপুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ, ২৭ এপ্রিল, ২০২১ঃঃ
কথায় আছে ‘জ্ঞানই শক্তি’। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে উন্নয়নের মহাসড়কে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। আধুনিক বিশ্বের সব উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির অবিস্মরণীয় বিপ্লবের ফলে পৃথিবীর মানচিত্র এক হয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজ।
সেবার তালিকা:
জমিজমা
জমিজমার বিভিন্ন রেকর্ডের জন্য আগে অনেক হয়রান হতে হতো। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় ই-সেবা কেন্দ্র থেকে তা সহজে সংগ্রহ করা যায়। এ জন্য অনলাইনে আবেদন করে আবেদনকারী জমিজমার সমগ্র দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে জনগণ খুব সহজে সেবা পাচ্ছে, অন্যদিকে সেবা প্রদানের সময় তথ্যাদি বিকৃত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকছে না। ফলে ভবিষ্যতে তথ্যপ্রাপ্তির পথ সহজ হচ্ছে।
ই-বুক
এখন প্রতিবছর ছাপা বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে ই-বুক আকারে প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারিভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়ায় এতে বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তক সহায়ক পুস্তক হিসেবে সহজেই আমরা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছি।
ই-পুঁজি
এখন বিভিন্ন অ্যাপ মেনেজমেন্টের মাধ্যমে একজন ব্যবসায়ী তার প্রয়োজনীয় মূলধন ক্লাউড ফাইন্ডিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারছে। চিনিকলের আখ সরবরাহ অনুমতি পত্র স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে এবং বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কৃষকরা তাদের পুঁজি পাচ্ছে। ফলে মহাজনদের নিকট থেকে নেওয়া উচ্চ ঋণের কবলে পড়তে হচ্ছে না। পাশাপাশি কৃষকরা তাদের সরবরাহ উন্নত করতে পারছে।
ফলাফল
বর্তমানে দেশের সব পাবলিক পরীক্ষার ফল অনলাইনে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের হয়রানি হ্রাস পেয়েছে।
ই-স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের অনেক স্থানে টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এতে রোগীরা ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারবে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মোবাইল ফোনে বা এসএমএসে অভিযোগ পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যার ফলে স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণ
এখন ঘরে বসেই আয়কর প্রদানকারীরা তাদের আয়করের হিসাব করতে পারেন এবং রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। টাকা স্থানান্তর, পোস্টাল, ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থসহ অন্যান্য বিষয় আদান-প্রদান দ্রুত হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজে টাকা স্থানান্তর করা যাচ্ছে।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন
সরকারি কর্মকাণ্ডে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি সেবার মান উন্নয়ন করা হয়েছে। যে কম্পানি নিবন্ধনে আগে সরাসরি যোগাযোগ করতে হতো, এখন ‘রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস’ গঠনের মাধ্যমে নিবন্ধনের কাজটিকে আরো সহজ ও দ্রুত করেছে।
ই- মনিটরিং
সরকারি- বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে মূল অফিসে/ জেলা সদরে বসে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এতে সরকারি- বেসরকারী সেবার মানের উন্নয়ন হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা কার্যক্রম বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই। ডিজিটাল সেবা দেওয়ার মাধ্যমে জনগণ দ্রুত উপকৃত হয়; সে জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা চালু করতে হবে।
নিচে প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১. অনলাইনের মাধ্যমে ভূমি হস্তান্তরের সব তথ্য, মালিকানা, নিবন্ধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও সব ধরনের কাজে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
৩. জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান এবং দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার মাধ্যমে আধুনিক গ্লোবাল ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ স্থাপন করা সহজ হবে।
৫. অনলাইনভিত্তিক তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে পারলে দেশের সব মানুষ তার প্রয়োজনীয় সব তথ্য সহজে জানতে পারবে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একান্ত আবশ্যক।
৬. অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি- বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করা যায়।
৭. অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি- বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করা যায়
প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার গুরুত্ব
আধুনিক জীবন যাপনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অপরিসীম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করেছে উন্নত, জীবনযাপনকে করেছে সহজ। তথ্য-প্রযুক্তি মূলত একটি সমন্বিত মাধ্যম, যা অডিও-ভিডিও, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটারসহ আরো বহু প্রযুক্তির সম্মিলনে দীর্ঘদিন ধরে চর্চার ফলে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধি লাভ করছে। এর ফলে অসংখ্য নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রসারের ফলে প্রধানত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মতো সারা বিশ্বের যোগাযোগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানা ধরনের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করতে এবং মানবজাতির কল্যাণে তথ্য উন্নয়নে তথ্য-প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এ দেশের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গঠনের কোনো বিকল্প নেই। আর তাই আমাদের আরো বেশি তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হতে হবে এবং এই খাতকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে ভবিষৎ সম্ভাবনার দিকে।
নূপুর রহমান
মুন্সীগঞ্জ,
২৭/০৪/ ২০২১